কক্সবাজার/পটুয়াখালী, ৩০ ডিসেম্বর : বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সাগরকন্যা কুয়াকাটা বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। এজন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজার ও কুয়াকাটাই হবে পর্যটন নগরীর প্রাণকেন্দ্র।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, কোরাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন্স, রকি সৈকত ইনানী, রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে কক্সবাজারে। এই সম্ভাবনা বাস্তবায়নে কক্সবাজারে তিন ট্রিলিয়ন টাকার বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে।
যেখানে রেললাইন, ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ ২৫টি মেগা প্রকল্প রয়েছে, ৭৭টি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পর্যটনে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। কক্সবাজার একদিন আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে। এই স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় পর্যটন রাজধানীর মানুষ।
অন্যদিকে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হবে, কক্সবাজারের জন্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং বাংলাদেশ আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। কক্সবাজারকে ঘিরে বর্তমান সরকারের মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। বিমানটি সাগর ছুঁয়ে কক্সবাজারে অবতরণ করবে। বিমানটি দিনরাত ২৪ ঘণ্টা উড়বে। যা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পর্যটন খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।
বেবিচক সূত্র জানায়, দেশে প্রথমবারের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠে নির্মিত রানওয়ে হবে দেশের সবচেয়ে বড়। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার পুরোটাই সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (CABA) অর্থায়ন করে। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
কক্সবাজারের পর্যটন বিকাশ এবং গভীর সমুদ্র বন্দরভিত্তিক বাণিজ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগও গড়ে তোলা হচ্ছে। খুব শিগগিরই দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এতে পর্যটন শিল্পে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।
শুধু যোগাযোগ অবকাঠামো নয়, দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় গেম চেঞ্জার হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর- বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ী, মহেশখালীতে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। জাপানের কাশিমা বন্দরের আদলে নির্মিত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরটি বাংলাদেশের প্রধান আমদানি বিন্দু চীনসহ বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক জোট আসিয়ানের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবে।
১৯৬২ সালে যখন কাশিমা বন্দর নির্মাণ শুরু হয় তখন এলাকাটি ছিল ধানক্ষেত। বন্দর নির্মাণের পর এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরও এ ধরনের বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি কক্সবাজারকে সিঙ্গাপুর, হংকংসহ দ্বীপভিত্তিক অর্থনৈতিক হাবের আদলে গড়ে তোলার জন্য সরকার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
আধুনিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও রেল সংযোগ, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বৈদ্যুতিক হাব নির্মাণের পাশাপাশি কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম দ্বীপভিত্তিক পর্যটন পার্ক। এছাড়াও কক্সবাজারে বিমানবন্দর, রেললাইন, ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, সাবরাং পর্যটন পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ ২৫টি মেগা প্রকল্পসহ ৭৭টি বাস্তবায়ন কাজ চলছে। এসব প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকার বেশি। যা এক বছরে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত মোট অর্থের দেড় গুণ।
বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে সাবরাং, নাফ ও সোনাদিয়ায় ইকো ট্যুরিজম করা হচ্ছে- প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্র নগরীতে প্রতি বছর ৬০-৭০ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে গেলেও বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম। তাই এবার বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে টেকনাফের সাবরাং, নাফ ও মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ সাজানো হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ ১৯৬২ সালে যখন কাশিমা বন্দর নির্মাণ শুরু হয় তখন এলাকাটি ছিল ধানক্ষেত। বন্দর নির্মাণের পর এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরও এ ধরনের বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি কক্সবাজারকে সিঙ্গাপুর, হংকংসহ দ্বীপভিত্তিক অর্থনৈতিক হাবের আদলে গড়ে তোলার জন্য সরকার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
আধুনিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও রেল সংযোগ, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বৈদ্যুতিক হাব নির্মাণের পাশাপাশি কক্সবাজারে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম দ্বীপভিত্তিক পর্যটন পার্ক। এছাড়াও কক্সবাজারে বিমানবন্দর, রেললাইন, ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, সাবরাং পর্যটন পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ ২৫টি মেগা প্রকল্পসহ ৭৭টি বাস্তবায়ন কাজ চলছে। এসব প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকার বেশি। যা এক বছরে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত মোট অর্থের দেড় গুণ।
বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে সাবরাং, নাফ ও সোনাদিয়ায় ইকো ট্যুরিজম করা হচ্ছে- প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্র নগরীতে প্রতি বছর ৬০-৭০ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে গেলেও বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম। তাই এবার বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে টেকনাফের সাবরাং, নাফ ও মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ সাজানো হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ দেশের প্রথম দ্বীপভিত্তিক পর্যটন ভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে।
সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে থাকবে পাঁচ তারকা হোটেল, ইকো-ট্যুরিজম, মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম ও সী-ক্রুজ, বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশেষ সংরক্ষিত এলাকা, সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের বিশেষ ব্যবস্থা, ভাসমান জেটি, শিশু পার্ক, ইকো-কটেজ, সাগরমণ্ডল, পানির নিচে। রেস্তোরাঁ, ভাসমান রেস্তোরাঁ, ইত্যাদি বিনোদনের বিভিন্ন সুবিধা। এছাড়া টেকনাফ শহরের কাছে নাফ নদীর মোহনায় জালিয়ার দ্বীপকে ঘিরে নাফ ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের কাজ চলছে। মূলত বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এই পার্কে ইকো কটেজ, লাইফ এন্টারটেইনমেন্ট থিয়েটার, মেগা শপিং মল, সিনেমা হল, গলফ ক্লাব, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ডের মতো ওয়াটার স্পোর্টস বিচসহ নানা আয়োজন থাকবে।
সন্ধ্যায় নিয়ন লাইটের নিচে ক্যাম্পিং করার ব্যবস্থা থাকবে। এই পর্যটন পার্কে দেশে প্রথমবারের মতো একটি ক্যাবল কার যুক্ত হবে। উপর থেকে পুরো দ্বীপের সৌন্দর্য দেখতে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে আসবেন পর্যটকরা। একটি ঝুলন্ত সেতুও থাকবে।
এছাড়া সমুদ্রদ্বীপ সোনাদিয়ায় ইকো-ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বেজা। পার্কটি পর্যায়ক্রমে ৯ বছরের মধ্যে ৮৯৬৭ একর এলাকা জুড়ে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সোনাদিয়া দ্বীপের মোট ভূমির পরিমাণ ৯৪৬৭একর, যা ২০১৭ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে বেজা কর্তৃক নিষ্পত্তি করা হয়। দ্বীপে একটি পর্যটন পার্ক স্থাপনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও রেললাইন প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ তিন লাখ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের কাজ চলছে। এই প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে আগামী ৫-৬ বছরের মধ্যে এই অঞ্চলটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হবে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতটি ১৮ কিমি (১১ মাইল) লম্বা এবং ৩ কিমি (১.৯ মাইল) চওড়া।
সাগরকন্যা বলে বিখ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলে আরও চারটি সমুদ্র সৈকত রয়েছে যা নজরকাড়া। নদী বেষ্টিত এসব সমুদ্র সৈকতের নাম হলো জাহাজমারা, তুফানিয়া, সোনারচর ও চর হেয়ার। পর্যটনের অপার সম্ভাবনায় ঘেরা চারটি সমুদ্র সৈকতের ভৌগোলিক অবস্থান পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালিতে নদী ও সমুদ্রের মিলনস্থল।
পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও কিছু সমস্যাও রয়েছে। এর মধ্যে রাঙ্গাবালীর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল আয়তনের দিক থেকে সুন্দরবনের পর বৃহত্তম বনাঞ্চল এবং সোনারচরের বিস্তীর্ণ প্রবাল সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে যুক্ত। 'জাহাজমারা' দ্বীপে সৌন্দর্যের অভাব নেই। এই দ্বীপের ভৌগলিক অবস্থান রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নে। জাহাজমারার কাছে আরও দুটি দ্বীপ রয়েছে। একটিকে বলা হয় 'তুফানিয়া' এবং অন্যটিকে 'চারহাইর' বলা হয় যার রঙ তীব্র সবুজ। সৈকতে লাল কাঁকড়ার অগণিত ঝাঁক দেখা যায়। বন বিভাগের দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত বনাঞ্চল এবং মাছ ধরার নৌকার বহর রয়েছে।
১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতে একটি টেকসই বাঁধ, মেরিন ড্রাইভ, বনায়ন, লাইফ গার্ড স্টেশন, পাবলিক টয়লেট, স্বয়ংচালিত লকার এবং একটি ছোট পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কুয়াকাটা হবে আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র সৈকত।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan